আমলা বনাম জনতাঃ যাদের দেখা যাচ্ছে, তারাই কি প্রতিপক্ষ নাকি অন্য কেউ?

আমলাতন্ত্র বনাম জনতার যুদ্ধে নামার আগে আমাদের জানা দরকার, নিশ্চিত করা দরকার – এই যুদ্ধটা আসলে কার বিরুদ্ধে? যাদের দেখা যাচ্ছে, বা দেখানো হচ্ছে, তারাই কি প্রতিপক্ষ?

রাজনীতি

২৭ মে, ২০২৫

Execution by firing squad painting symbolizing powerless people punished by systems | Khalid Hasan Zibon's Blog | Zibon Thinks | নিষ্পাপ মানুষকে রাষ্ট্রীয় শাস্তির প্রতীকী চিত্র | খালিদ হাসান জীবন-এর বাংলা ব্লগ | জীবনের ভাবনাগুলো
Execution by firing squad painting symbolizing powerless people punished by systems | Khalid Hasan Zibon's Blog | Zibon Thinks | নিষ্পাপ মানুষকে রাষ্ট্রীয় শাস্তির প্রতীকী চিত্র | খালিদ হাসান জীবন-এর বাংলা ব্লগ | জীবনের ভাবনাগুলো

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ পড়লাম, আন্দোলনকারীদের ইন্টার্ভিউ দেখলাম। যারা আন্দোলন করতেছে, তারা মূলত হায়ারার্কির নিচের দিকের মানুষ।

পলিসি বানায় হায়ারার্কির একদম শীর্ষে থাকা মানুষেরা। তো এমন একটা সিস্টেমে আসলে যা হওয়ার, তাই হইছে। টপ-ডাউন এবিউজের একটা রাস্তা খোলা হইছে।

এইটা দিয়া দুর্নীতি কমবে না, দুর্নীতি কমানো হয়তো এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যও না! তবে উর্ধ্বতনের ক্ষমতা বাড়বে, অধস্তনের ওপর চাপ বা অনেকক্ষেত্রে অত্যাচারও হইতে পারে।


জনতার রাগ বনাম বাস্তবতা

সরকারি চাকরিজীবীদের ওপর আমজনতার রাগ আছে। রাগের যৌক্তিক কারণও আছে। তবে এখানে জনতা বনাম সরকারি চাকরিজীবীদের যে একটা সংঘর্ষের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে, এটা আমার কাছে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে একটা আইওয়াশ।

যাদের কারণে জনতার ভোগান্তি, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে, অন্যদিকে ঠুনকো কারণে অধস্তনদের চাকরি চলে যাবে।


অধ্যাদেশের মূল বক্তব্য
  • অনুগত না হওয়া

  • অন্য কারও অনানুগত্যের কারণ হওয়া

  • একা বা অন্যদের সাথে নিয়ে কাজ বন্ধ করা বা অনুপস্থিত থাকা

  • অন্য কাউকে উপস্থিত থাকতে বাধা দেওয়া বা অনুপস্থিত থাকতে প্ররোচিত করা


...এই কাজগুলো "অসদাচরণ" বলে গণ্য হবে। আর কেউ অসদাচরণ করলে তার শাস্তি হতে পারে ডিমোশন, অপসারণ, বা বরখাস্ত।


  • অধ্যাদেশে নোটিশ পিরিয়ড ৭ দিন, এর মধ্যে কারণ দর্শাতে হবে

  • দর্শানো কারণে সন্তুষ্ট না হলে শাস্তি

  • "ক্ষেত্রবিশেষে" নিজে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে


আব্দুল হামিদ যখন দেশ ছাড়েন, তার ক্লিয়ারেন্স দেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু হইচই হওয়ার পর শাস্তি দেওয়া হইছে ইমিগ্রেশনের জুনিয়র কর্মকর্তা তাহসিনা আরিফ ও কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরীকে। | President Abdul Hamid Khan | Khalid Hasan Zibon


আব্দুল হামিদ যখন দেশ ছাড়েন, তার ক্লিয়ারেন্স দেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু হইচই হওয়ার পর শাস্তি দেওয়া হইছে ইমিগ্রেশনের জুনিয়র কর্মকর্তা তাহসিনা আরিফ ও কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরীকে। (সূত্রঃ ডেইলি স্টার, ২৫ মে ২০২৫)


সরকারকে যেসব প্রশ্ন করা দরকার

  1. এই অধ্যাদেশ কেন? এর দ্বারা জনগণের লাভ কী কী বা ক্ষতি কী কী?


  2. এর দ্বারা ব্যুরোক্রেসিকে কীভাবে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হবে?


  3. এই আইন কীভাবে দুর্নীতিবাজ ঊর্ধ্বতনদের অবৈধ আদেশ প্রত্যাখ্যানকারী জুনিয়র কর্মীদের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?

  4. কী ধরনের স্বাধীন তদারকি কমিটি থাকছে?

  5. অনৈতিক আদেশ ফাঁস বা প্রতিবাদকারীর সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

  6. আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় কেন মাত্র ৭ দিন? "ক্ষেত্রবিশেষ" ঠিক করবে কে?


আমাদের প্রত্যাশা ব্যুরোক্রেসির মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, তাদেরকে সেবামুখি করা, তাদের দূর্নীতির সুযোগ কমানো। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যারা আসলে নেপথ্যের নায়ক, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবেন, বলির পাঁঠা হবেন জুনিয়র সরকারি চাকরিজীবীরা।


আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার আমাদের দরকার। তাদের মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যাল্যান্স প্রতিষ্ঠা করা দরকার। জুলাইয়ের ত্যাগও যদি সেটা সম্ভব করতে না পারে, তা হবে বড় ব্যর্থতা।


ভুল শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাচ্ছি না তো?

তারা বাধা দিলে এটা আমলাতন্ত্র বনাম জনতার যুদ্ধই হবে। হয়তো অলরেডি বহু মানুষ রেডি হয়ে আছে তাদের বিরুদ্ধে নামার জন্য, কারণ সরকারি সেবা নিয়ে সবারই কোন না কোন বাজে অভিজ্ঞতা আছে, বহুদিনের পুষে রাখা ক্ষোভ আছে।

তবে আমলাতন্ত্র বনাম জনতার যুদ্ধে নামার আগে আমাদের জানা দরকার, নিশ্চিত করা দরকার –

এই যুদ্ধটা আসলে কার বিরুদ্ধে? যাদের দেখা যাচ্ছে, বা দেখানো হচ্ছে, তারাই কি প্রতিপক্ষ?

সমাপ্ত

লেখাটি ভালো লেগেছে?
অন্য কেউ জানলে উপকৃত হবে বলে মনে করেন? তাহলে শেয়ার করুন অন্যদের সাথে! 😊

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

রাজনীতি

নিয়ে আরও লেখা