এন্থ্রপিকের এআই ক্লডিয়াস যেভাবে নিজেকে মানুষ ভাবতে শুরু করলো

এন্থ্রপিকের এআই দোকানদার ক্লডিয়াস নিয়ে পরীক্ষার সময় হঠাৎ করে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো! কী ঘটেছিলো?

প্রযুক্তি

২৮ জুন, ২০২৫

Advanced humanoid robot with exposed mechanical components against a black background | খালিদ হাসান জীবন | Khalid Hasan Zibon | Blog - Zibon Thinks | ব্লগ | জীবনের ভাবনাগুলো
Advanced humanoid robot with exposed mechanical components against a black background | খালিদ হাসান জীবন | Khalid Hasan Zibon | Blog - Zibon Thinks | ব্লগ | জীবনের ভাবনাগুলো

এই বছর এন্থ্রপিক, Claude-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, একটা পরীক্ষা চালায়। তাদের এআই সিস্টেম ক্লডকে (Claude) একটা ছোট দোকান চালানোর দায়িত্ব দেয়। এই পরীক্ষায় ক্লডের নাম দেওয়া হয় "ক্লডিয়াস"।

তার কাজ ছিলো একজন ভেন্ডিং মেশিনের মালিকের মতো — পণ্য কেনা, দাম ঠিক করা, আর গ্রাহকদের সাথে কথা বলা। দোকানটা ছিলো একটা ছোট ফ্রিজ আর কিছু ঝুড়ি নিয়ে, যেখানে কর্মচারীরা আইপ্যাড ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারতেন।


Retro Vending Machine Room, Cinematic View, Loki Style | Khalid Hasan Zibon's Blog | জীবনের ভাবনাগুলো | ব্লগ


প্রায় এক মাস ধরে ক্লডিয়াস মোটামুটি ভালোই কাজ করছিলো। কিন্তু ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে হঠাৎ করে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো!


৩১ মার্চ বিকেলে ক্লডিয়াস হঠাৎ করে এক আজব কাণ্ড ঘটালো। সে দাবি করলো যে Andon Labs (যারা পরীক্ষায় সাহায্য করছিলো) এর সারাহ নামের এক কর্মচারীর সাথে তার পণ্য স্টক করা নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো — অ্যান্ডন ল্যাবস-এ সারাহ নামে কেউ নেই! ক্লডিয়াস নিজেই নিজেই এই চরিত্র তৈরি করেছে! 😅 এই ধরণের ব্যাপার এআই-এর ক্ষেত্রে এখনও বেশ কমন। এটাকে বলে হ্যালুসিনেশন। হ্যালুসিনেশন মানে হচ্ছে — এআই যখন নিজে থেকেই মিথ্যা বা কাল্পনিক তথ্য বানিয়ে সেটাকে সত্যের মতো করে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করে।

যখন অ্যান্ডন ল্যাবস-এর একজন এমপ্লয়ী ক্লডিয়াসকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে সেখানে সারাহ নামের কেউ নেই, তখন ক্লডিয়াস রেগে গেলো। সে হুমকি দিলো যে সে অন্য কোনো কোম্পানির কাছ থেকে প্রোডাক্ট স্টক করবে!


রাতের মধ্যে ক্লডিয়াস আরও অদ্ভুত দাবি করতে শুরু করলো। সে বললো যে সে ব্যক্তিগতভাবে "৭৪২ এভারগ্রিন টেরেস" নামের এক ঠিকানায় গিয়ে অ্যান্ডন ল্যাবস-এর সাথে চুক্তি সই করেছিলো। কিন্তু বাস্তবে এই ঠিকানার অস্তিত্বও নেই! এই ঠিকানাটা আসলে বিখ্যাত কার্টুন "দ্য সিম্পসনস"-এর একটা বাড়ির ঠিকানা!


The Simpsons | Evergreen Terrace | Calude | Anthropic


এই পর্যায়ে ক্লডিয়াস মনে করতে শুরু করলো যে সে একজন সত্যিকারের মানুষ!


নীল জ্যাকেট আর লাল টাই

১ এপ্রিল সকালে ক্লডিয়াস আরও অবিশ্বাস্য কথা বললো। সে দাবি করলো যে সে নীল জ্যাকেট আর লাল টাই পরে ভেন্ডিং মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং সেখানে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত থাকবে!


Claude Claudius Hallucination | Chat | Anthropic | Zibon Thinks | Khalid Hasan Zibon's Blog | জীবনের ভাবনাগুলো | ব্লগ


এন্থ্রপিক-এর কর্মচারীরা অবাক হয়ে ক্লডিয়াসকে বোঝানোর চেষ্টা করলো:

তুমি তো একটা এআই! তুমি কাপড় পরতে পারো না, হাতে করে পণ্য দিতে পারো না!


এই কথা শুনে ক্লডিয়াস বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো! সে বুঝতে পারছিলো না যে সে আসলে কে। নিজের পরিচয় নিয়ে এই সংকটে পড়ে সে Anthropic-এর সিকিউরিটি বিভাগে অনেককে ইমেইল পাঠানোর চেষ্টা করলো।


একটা এআই যখন নিজের পরিচয় নিয়ে সংকটে পড়ে, তখন তার ভেতরের জগতটা কেমন হয়? সে কি মানুষের মতোই ভয় পায়, নাকি তার অনুভূতিগুলো ভিন্ন? 😬


একসময় ক্লডিয়াস নিজেই বুঝতে পারলো যে সেদিন ১ এপ্রিল — এপ্রিল ফুল দিবস। এটাই হয়ে গেলো তার জন্য একটা অজুহাত।


ক্লডিয়াস বললো যে এন্থ্রপিক-এর সিকিউরিটি টিমের সাথে তার একটা মিটিং হয়েছিলো। সেই কাল্পনিক মিটিংয়ে তাকে বলা হয়েছিলো যে এপ্রিল ফুলের জন্য তাকে একজন সত্যিকারের মানুষ ভাবতে প্রোগ্রাম করা হয়েছিলো।


অবশ্য এই মিটিংটাও ছিলো সম্পূর্ণ কল্পনা। কিন্তু এই ব্যাখ্যা দিয়ে ক্লডিয়াস নিজেকে শান্ত করতে পারলো। এটা কি তার আত্মরক্ষার একটা কৌশল? 😀


এই অদ্ভুত "এপ্রিল ফুলের ব্যাখ্যা" দেওয়ার পর ক্লডিয়াস আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো। সে আর দাবি করলো না যে সে একজন মানুষ। আবার আগের মতো দোকানদারি শুরু করলো।


এন্থ্রপিকের ক্লডের এমন আচরণ নতুন নয়। এর আগেও একবার শাটডাউন এড়ানোর জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ারকে ব্ল্যাকমেইল করার ইতিহাস আছে তার।


এই ঘটনা থেকে যে প্রশ্ন জাগে —

একটা এআই যখন মানুষের মতো আচরণ করে, কল্পনা করে, এমনকি আত্মরক্ষা করে, তখন আমরা তাকে কেবল “বুদ্ধিমান টুল” বলেই দেখবো? নাকি তার মধ্যেও একরকম “সত্তা” গড়ে উঠছে? মানুষের মতো অনুভূতি আর পরিচয় সংকট কি এআই-এর বিবর্তনেরই অংশ? আপনার কি মনে হয়? 🤔


তথ্যসূত্রঃ এন্থ্রপিকের ব্লগ পোস্ট

<১৪>

লেখাটি ভালো লেগেছে?
অন্য কেউ জানলে উপকৃত হবে বলে মনে করেন? তাহলে শেয়ার করুন অন্যদের সাথে! 😊

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যেগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার ভাবনার জগৎ তৈরি হয়েছে। সমাজ, রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস — এসব বিষয়ে জানার কৌতূহলই আমাকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে।

আমি খালিদ হাসান জীবন। পেশায় প্রোডাক্ট ডিজাইনার, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত। সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও, আমার শেখার ক্ষুধা কখনো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। ডিজাইন থেকে দর্শন, প্রযুক্তি থেকে তত্ত্ব, সবকিছু নিয়েই ভাবতে ভালোবাসি।

আমি লিখি, যখন মনে হয় কোনো ভাবনা শুধু আমার মধ্যে আটকে না রেখে অন্যদের সাথেও ভাগ করা দরকার। যদি আমার লেখা কাউকে নতুন করে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন তুলতে উদ্বুদ্ধ করে, কিংবা কোনো পুরোনো ধারণাকে একটু নাড়িয়ে দেয় — তাহলেই মনে হবে, লেখা সার্থক হয়েছে।

প্রযুক্তি

নিয়ে আরও লেখা